নরমাল ডেলিভারিতে আস্থার প্রতীক ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- Updated Nov 22 2023
- / 563 Read
সাহাব উদ্দিন;
ফেনী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে মুন্সীরহাট বাজারের পাশেই ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটিতে এখন অস্ত্রোপাচারের চেয়ে নরমাল ডেলিভারির (স্বাভাবিক প্রসব) প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসুতি নারীদের স্বজনরা।
সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে চিকিৎসা খরচ যেমন বেশি হয়, তেমনি প্রসূতিদের মৃত্যুঝুঁকিও থাকে বলে মনে করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম। ২০২২ সালের মাঝামাঝির দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে ডা. রুবাইয়াত বিন করিম প্রসূতি চিকিৎসাসেবার নরমাল ডেলিভারি (স্বাভাবিক প্রসব) কার্যক্রম হাতে নেন। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারও চালানো হয়। এরপর থেকে এখানে স্বাভাবিকভাবে নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে। এর আগে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শিশু নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এর তিন গুণে।
গত নভেম্বর মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০৬ শিশু নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম গ্রহণ করে। হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে নরমাল ডেলিভারিতে একদিনে ৯ শিশুর জন্ম হয়েছিল। হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি শুরু হলেও একদিনে সর্বোচ্চ ৯ জন প্রসুতির স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শিশুর নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম হয়েছে বলে জানা যায়। তবে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ নার্সদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার কারণেই এটা সম্ভব বলে দাবি হাসপাতাল কতৃপক্ষের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন প্রসূতিদের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মন্তলা গ্রাম থেকে আসা ফেরদৌস আক্তার নামে একজন প্রসূতি তাঁর নবজাতক শিশু সন্তানকে নিয়ে বসে আছেন। এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে ওই প্রসূতি ও তাঁর সন্তানকে চিকিৎসাসেবা দেন। প্রসুতি ফেরদৌস আক্তার জানান, গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে প্রসববেদনা নিয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরদিন সকালে অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিক নিয়মে ডাক্তার ও অভিজ্ঞ নার্সদের সহযোগিতায় তিনি সন্তান জন্ম দেন। ওই মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীরে অস্ত্রোপাচার ছাড়া স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করানোর ফলে তিনি সুস্থ আছেন।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সঞ্জিতা রানী পোদ্দার বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এভাবে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন করে প্রসূতি আসেন। তাঁরা প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার ছাড়াই নরমাল ডেলিভারি করান। শরীরে অস্ত্রোপচার না করায় এসব মায়েরা স্বল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে সন্তান নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, নরমাল ডেলিভারি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অনেক ভালো। ডেলিভারির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মায়েদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া সম্ভব হয়। নরমাল ডেলিভারি করানো মায়েরা খুব দ্রুত শিশুদেরকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন এবং খুব কম সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এসব কারণে নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতি মায়েরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী অগ্রহী হয়ে উঠেছেন।